dushtu bagh(দুষ্টু বাঘ)

দুষ্টু বাঘের শাস্তি

  এখান থেকে কয়েক ক্রোশ দূরে ছিল একটি বিশাল বন। বন টি ছিল খুবই ঘন, এতই ঘন যে দিনের আলোতেও সব কিছু কে অন্ধকার বলে মনে হত। ঠিক এই কারনে বোধ হয় বনের শিকারিরা বনের মধ্যে যেতে ভয় পেত। এছাড়াও একটি কারনও ছিল। বনের রাজা যে ছিল সে হল একটি সিংহ।  সে ছিল বনের হর্তা, কর্তা, বিধাতা। সে তার বুদ্ধি ও শক্তির জোরে বনের সমস্ত পশু পাখি কে রক্ষা করত।

         সেই বনে বাস করত একটি ফুটফুটে হরিন ছানা। বনে তার একটি ঘর ও ছিল। সেই ঘরের চারধারে সে সুন্দর সুন্দর লতা পাতার  গাছ লাগিয়ে রাখত। যাতে খাবার সংগ্রহ করতে তাকে আর বাইরে কোথাও যেতে না হয়। সামনে ছিল একটি খরস্রোতা নদী। ফলে জলের জন্য ও হরিন কেবল এই নদী কেই ব্যাবহার করত। প্রতিদিন সকালে ওঠে নদী থেকে জল এনে গাছ গুলির পরিচর্যা করত। খিদে পেলে লতা পাতা ও জল খেয়ে সুন্দর কাটিয়ে দিত। এই ছিল তার দৈনন্দীন জীবন।   

         কিন্তু সুখ কি আর সবসময় থাকে? একদিন হরিনের ঘরের পাশ দিয়ে যাচ্ছিল একটি দুষ্টু বাঘ। তার হরিন কে দেখে বড়ই লোভ হল। সে ভাবল হরিন গুহার ঘর থেকে বেরোলেই তার ঘাড় মটকে খেয়ে ফেলবে। কিন্তু বনের আলাদা একটি নিয়ম ছিল। যেই যাকে আক্রমন করুক না কেন সিংহ কে আগে জানাতে হত। তাই সে মনে মনে বুদ্ধি আঁটতে লাগল। কিভাবে হরিন কে দোষী করা যায়। যাতে হরিন কে শাস্তি দিতে সিংহ তাকেই ভক্ষন করার আদেশ দেয়।

        

     একদিন দুষ্টু বাঘ রাজার কাছে নালিশ করল। বলল যে হরিনের ঘর ও দুয়ার এক কালে তারই ছিল, সে অন্য বনে খাবার সংগ্রহ করতে যাওয়ার ফলে হরিন তার ঘর দখল করে নিজে বসবাস করছে। সে দুজন ভালুক কে সাক্ষী হিসেবে ও ডেকে নিয়ে গেল। সব কিছু শুনে সিংহ রাজা পেয়াদা দিয়ে হরিন কে ডেকে আনতে পাঠাল। বিচারের কথা শুনে হরিনের তো কাচুমাচু অবস্থা। সে রাজার সামনে কেঁদেই ফেলল। বলল

... রাজা মশাই আমার মা মারা যাওয়ার পর ওখানেই আমি থাকি। আর কোথাও খাবার সংগ্রহ করতে যাতে না যেতে হয় তাই আমি নিজেই ওখানে একটা বাগান বানিয়ে ছি। 

শুনে বাঘ বলল

...সব মিথ্যে কথা, ওই বাগান গুহা সব আমার, আমি কিছু দিন ছিলাম না বলে হরিন ওখানে জোর করে ঘাটি বসিয়েছে। আমি কাল যখন হরিন কে বলতে গেলাম, এইটুকু হরিনের কি তেজ? বলে কি না তোমাকে আমি চিনিনা? বললাম ঠিক আছে রাজা মশাই এর কাছে চল। সঠিক বিচার হবে। বলে কিনা কে রাজা মশাই, এখানে আমিই রাজা।

সিংহ বলল-

... কি হরিন তুমি একথা বলেছ?

হরিন বলল-

... না রাজা মশাই, বাঘ কে তো আমি কোনোদিনই দেখিই নি। আর আমার সাথে বাঘ কবেই বা দেখা করল।

সিংহ সব বুঝতে পারল। সিংহ হরিন কে বলল- তুমি যদি অনেক দিন ওখানে আছো তবে ওখানের সমস্ত জিনিস তোমার নিশ্চয় জানা আছে?

হরিন বলল – হ্যাঁ মহারাজ। কি জিজ্ঞেস করবেন বলুন?

রাজা বলল- আচ্ছা তোমার বাগানে কয়টি গাছ আছে?

হরিন বলল- ৩২ টি

বাঘ বলল- না রাজা মশাই ওখানে মোট ৩৩ টি গাছ আছে।

হরিন তো অবাক। আসলে বিচার চলাকালিন বাঘ ভালুক কে দিয়ে একটি গাছ পুঁতে দিয়ে এসেছিল।

রাজা বলল ঠিক আছে চলো দেখায় যাক। সবাই মিলে হরিনের বাসায় উপস্থিত হল। গাছ গোনা শুরু হল। গাছ গোনার সময় হরিনের নদীর ধারে নতুন গাছের দিকে চোখ পড়ল। সে বলল রাজা মশাই ওই গাছটি তো আমি লাগাই নি। এখানে তো গাছ হওয়ার কথায় নয় কারন লতা পাতা গুলির নিচেই শুধু পাথরই আছে। কোনো মাটি তো নেই। আর পাথর গুলি তো ওপড়ানোই যায় না তাই আমার জল আনতে খুবই কষ্ট হয়।

রাজা ধমক দিয়ে বলল চুপ কর মিথ্যেবাদী এটা মোটেও তোমার আস্তানা নয়।  আমি সব বুঝতে পেরেছি। তোমাকে শাস্তি পেতেই হবে?

এই সবাই মিলে এই গুহার সামনে এসো। শেষ একটা পরীক্ষা করে নেওয়া যাক। হরিন ও বাঘের মধ্যে এই গুহা থেকে ছুটে যে ওই গাছটার চারধারে ঘুরে এখানে আগে আসতে পারবে। সেই হবে এই আস্তানার আসল মালিক। কারন সে এই এলাকা সম্পর্কে খুব ভাল ভাবে জানে।

         হরিন প্রথমে রাজি হচ্ছিল না কারন ছুটতে গিয়ে পাথরে পা পড়লে একেবারে নদীর জলে।আবার হেরে গেলেও বাঘের পেটে। তাই সে কোন রকমে রাজি হয়ে গেল।

 ওপাশে বাঘ এক লহমায় রাজি হয়ে গেল। কারন হরিনের শেষ কথা গুলি বাঘ আর কানেই নেয় নি। সে ভাবছিল হরিনের থেকে তো আমি দ্রুত ছুটব। সুতরাং আজ সুস্বাদু হরিনের মাংস আমার ভাগ্যে লেখা আছে।

ছোটা শুরু হল হরিন প্রথমে জোরে ছুটলেও গাছের কাছে গিয়ে থমকে দাঁড়াল। আর বাঘ দিল দৌড়। গাছের পাশে বড় বড় পাথরের খোচাঁয় নিজেকে সামলাতে না পেরে একেবারে জলের তলায় গিয়ে পড়ল।

         সিংহ হরিন কে বলল দেখলেতো দুষ্টু লোকের শাস্তি কেমন হওয়া উচিৎ? আমি আগেই বুঝতে পেরেছিলাম বাঘ মশাই এর কৃত্তি। তুমি খুব সাবধানে থেকো। আর কোনো সমস্যায় পড়লে আমাকে খবর দিও।

         হরিন সিংহ রাজাকে ধন্যবাদ জানাল। ...... 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *